ইমাম রইজ উদ্দিনের কারাগারে মৃত্যুর ঘটনায় প্রেস ব্রিফিংয়ে ব্যাখ্যা দিলেন জিএমপি
মোঃ হাইউল উদ্দিন খান, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক


মো.আল-আমিন সরকার পূবাইল প্রতিনিধি
গাজীপুর মহানগরীর পূবাইল থানার ৩৯ নং ওয়ার্ডের হায়দরাবাদের তালগাছিয়ার টেক এলাকায় শিশু বলাৎকারের অভিযোগে জনতার হাতে আটক ও গণধোলাইয়ের শিকার আহত আখলাদুল জামে মসজিদের ইমাম রইজ উদ্দিনের (৩২) কারাগারে মৃত্যুর ঘটনায় সাংবাদিকদের বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) উপ-পুলিশ কমিশনার(অপরাধ দক্ষিণ) এন এম নাসিরুদ্দিন।
বুধবার রাত ১১ টায় পুলিশের অপরাধ (দক্ষিণ) বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার এন এম নাসিরুদ্দিন তার টঙ্গী কার্যালয়ে ঘটনাপ্রবাহ ও উদ্ভুত পরিস্থিতি সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রেস ব্রিফিং করেন।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়,গত রোববার (২৭এপ্রিল) সকাল আনুমানিক সাড়ে ১১টার দিকে পূবাইলের হায়দরাবাদ এলাকার আখলাদুল জামে মসজিদের ইমাম রইজ উদ্দিন একশিশুকে বলৎকারের অভিযোগে স্থানীয় জনতা আটক করে। খবর পেয়ে পূবাইল থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখে প্রায় ২/৩ শ’ উত্তেজিত লোক রইজ উদ্দিনকে মারধর করে আটকে রেখেছে। পুলিশ আহত অবস্থায় জনতার কাছ থেকে উদ্ধার করে নিজেদের হেফাজতে নেয়।
আহত রইজ উদ্দিনকে তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসার জন্য টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসা শেষে দুপুর ১টা ৪৫ মিনিটে তাকে পূবাইল থানায় আনা হয়। ইতোমধ্যে দুপুর ১২টা ১৫ মিনিটে ভুক্তভোগী কিশোরের (১৪) বাবা মাইনুদ্দিন বাদী হয়ে রইজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে পূবাইল থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫ এর ৯(১) ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর বিধি মোতাবেক রইজ উদ্দিনকে ২৭ এপ্রিল দুপুর ২টা ১৫ মিনিটে আদালতে পাঠানো হয়। আদালত শুনানি শেষে তাকে গাজীপুর জেলা কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন ।
প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি আরও জানান কারাগারে থাকা অবস্থায় ২৮ এপ্রিল (সোমবার) রাত আনুমানিক ৩টার দিকে রইজ উদ্দিন অসুস্থ বোধ করেন। কারা কর্তৃপক্ষ দ্রুত তাকে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ২৮ এপ্রিল দুপুরে গাজীপুর জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. শহীদ উল্লাহ ও পুলিশের উপস্থিতিতে লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. এএনএম আল মামুন ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করেন। এরপর লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
মামলাটি বর্তমানে তদন্তাধীন রয়েছে। স্থানীয় সাক্ষীদের জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়েছে এবং ঘটনাস্থল থেকে আলামত জব্দ করা হয়েছে। এছাড়া, এই মামলায় যৌন হয়রানির শিকার মোট ০৫ জন ভিকটিম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫ এর ২২ ধারা অনুযায়ী আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।
উপ-পুলিশ কমিশনার এন এম নাসিরুদ্দিন উদ্বেগ প্রকাশ করে জানান, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে কিছু ব্যক্তি বা গোষ্ঠী ভুল তথ্যের ওপর ভিত্তি করে এবং ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে তদন্ত প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে। তারা থানা ঘেরাও, মানববন্ধন, মহাসড়ক অবরোধ, মিছিল, প্রতিবাদ সভা এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ও অপপ্রচার চালিয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করছে। পুলিশ এই ধরনের কর্মকাণ্ডকে স্বাভাবিক আইনি ও বিচারিক প্রক্রিয়ায় অযাচিত হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখছে এবং সকলকে এ বিষয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে।
উল্লেখ্য গণধোলাইয়ের শিকার ইমামের মৃত্যুকে পরিকল্পিত হত্যা বলে দাবি করেছে তার পরিবার। এ ঘটনায় সোমবার রাতে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে ওই ইমামের স্ত্রী পূবাইল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অন্যদিকে বুধবার গাজীপুর জেলাপ্রশাসক কার্যালয়ের সামনে ইমামকে নাটকীয়ভাবে হত্যা করেছে দাবি করে মুফতি গিয়াসউদ্দিন তাহেরীর নেতৃত্বে গাজীপুর আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের মানব বন্ধনে অনুষ্ঠিত হয়।অন্য দিকে সারা বাংলাদেশে এই সংগঠনটিসহ কিছু সংগঠন বিচাররের দাবিতে মিটিং মিছিল অব্যাহত রেখেছেন।